নিজস্ব প্রতিবদেক:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনটা মাসও হয়নি এখনো। এই তিনটা মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এসব চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি- হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি সেই বিভাজন থেকে যায়, বিভেদ থেকে যায় এটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।
তিনি বলেন, এই কয়েকটা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কি উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আমরা এতোদিন লড়াই করলাম, কিন্তু অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই না। আমি তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য সমস্ত পত্রিকাগুলোতে যে আক্রমণ শুরু হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই।
চাঁদাবাজি ও কর ফাঁকির দুই মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন আর সমগ্র জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। রক্তে ভেসে গেছে বাংলাদেশের রাজপথ। দেশের মানুষ বারবার দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তার ফলশ্রুতি কী এই বাংলাদেশ? আজকে তিন মাসও যায়নি রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ! কেনো এই ভয়াবহ হিংসা? সমস্যা কোথায়? আর কতো এই বিভাজন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে? এটা কি চিন্তা করতে পারেন? গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতংকিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। আজকে কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন আর গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের দিকে ঠেলে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য মিডিয়াতে যে ধরনের আক্রমন শুরু হয়েছে তার নিন্দা জানাই। যে মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য সারাজীবন লড়াই করলাম সেখানে জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও। এই বাংলাদেশ আমি কখনো দেখতে চাইনি। আগেও না। কারো দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জীবন দিয়ে রক্ষা করতে হবে। এটাই গণতন্ত্র। আমরা এক ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি কারণ সে আমার গলা টিপে ধরেছে। অতএব ভেবে-চিন্তে কাজ করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন যারা জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও লেখেন। আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়? কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কারো একক নয়। অসংখ্য তরুণ-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। কারো কাছে মাথানত করবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বিভেদ বিভাজন রেখে কখনো এগোনো যায় না।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
Discussion about this post