নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জারিফ ফারহান (১৩)।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, “জারিফের শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। আজ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।”
জারিফ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা হাবিবুর রহমান ও মা রাশেদা ইয়াসমিন।
এর আগের দিন শুক্রবারও জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই শিশুশিক্ষার্থী তাসনিম আফরোজ আয়মান (১০) ও মুসাব্বির মাকিন (১৩) মারা যায়। আয়মানের শরীরের ৪৫ শতাংশ এবং মাকিনের ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। আহত অবস্থায় রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় অর্ধশত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৬ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (অজ্ঞাতনামা) এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।
গতকাল এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, “আজ আমরা আরও দুটি নিষ্পাপ প্রাণ হারিয়েছি। আয়মানের বাড়ি শরীয়তপুরে, মাকিনের গাজীপুরে। মরদেহ দাফনের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, বর্তমানে ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪০ জন রোগীর মধ্যে পাঁচজন আশঙ্কাজনক, ১০ জন সিভিয়ার এবং ২৫ জন ইন্টারমিডিয়েট অবস্থায় রয়েছে। ১০ জন রোগীকে পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে, বাকিদের স্থানান্তর করা হয়েছে কেবিনে। শনিবার ৪-৫ জন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ভেন্টিলেশনে থাকা দুই রোগী এখন নিজেরা নিঃশ্বাস নিতে পারছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২১ জুলাই দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ে। এর আগে ১টা ৬ মিনিটে তেজগাঁওয়ের এ কে খন্দকার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর এটি যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটি জনবহুল এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
দুর্ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক আহত হন, যাদের অধিকাংশই শিশুশিক্ষার্থী। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
আহতদের চিকিৎসায় চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিশেষ মেডিকেল দল বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
এ দুর্ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তারা কাজ করছে। সরকার জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং বিমান-সম্পর্কিত দুর্ঘটনা রোধে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Discussion about this post