বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার আমতলীতে দাওয়াত না দেওয়ায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষের অনুষ্ঠানে ঢুকে সব খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে গেছেন মাহবুব কাজী ও রিপন কাজী নামে দুই ব্যক্তি ও তাদের অনুসারীরা। শুধু তাই নয়, এ অপকর্মের পর আবার ফেসবুকে নিজেদের ছবিও পোস্ট করেছেন তারা।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় উঠে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরগুনার আমতলী উপজেলার কালিবাড়ী ন ম ম আমজাদিয়া আলিম মাদরাসায় ঘটে এ ঘটনা।
জানা গেছে, ঘটনার মূলহোতা মাহবুব কাজী ও রিপন কাজী যথাক্রমে গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন ম ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। আমতলী সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. ফজলুল হককে কমিটির সভাপতি করা হয়। বৃহস্পতিবার কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য ওইদিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করে। কিন্তু মাদরাসার সভায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন গুলিশাখালী ইউনিয়ন ও ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসার এক শিক্ষকের কাছ থেকে রিপন হাজী নামে এক বিএনপি নেতা দাওয়াত না দেওয়ার কারণ জানতে চান। পরে ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং তাদের দাওয়াত না দেওয়ার কারণ জানতে চান। পরে শিক্ষকদের গালাগাল করে তারা রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলেন এবং অবশিষ্ট খাবার যাতে আমন্ত্রিত অতিথিরা খেতে না পারেন সে জন্য পাতিলে টিস্যু, পানি ও তাদের খাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে রাখেন। পরে তারা শিক্ষক, কর্মচারী ও সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হুমকি দিয়ে চলে যান।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত রিপন কাজী তার ফেসবুকে গ্রুপ ছবি দিয়ে পোস্ট করেন, ‘ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদরাসায় পিকনিকের কিছু স্মৃতি’। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নিন্দার ঝড় উঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মাদরাসার এ ঘটনা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলকেও হার মানিয়েছে। এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
গুলিশাখালী ৯নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী খাবার খেয়ে ফেলার কথা স্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিয়ে অনুষ্ঠান করায় ও আমাদের দাওয়াত না দেওয়ায় আমরা খাবার খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু কোনো খাবার নষ্ট করিনি।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী মাদ্রাসার সভাকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক, কর্মচারী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের গালাগাল করেন। এমন কাজের সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের শাস্তি দাবি জানান তিনি।
আমতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম মৃধা এমন কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বলেন, এমন বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িত বিএনপির যে নেতাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। দলীয়ভাবে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে, আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। অভিযোগ পেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে
Discussion about this post