নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। আরপিওতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আরপিও সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভার পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ২০২৫ চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইন নীতিগতভাবে অনুমোদন পেয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আরপিওতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী হলো—ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা। পাশাপাশি ‘না ভোট’ পুনর্বহাল করা হয়েছে, যাতে কোনো নির্বাচনী আসনে কেবল একজন প্রার্থী থাকলে ভোটাররা তাকে ভোট না দেওয়ার সুযোগ পান।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এই বিধান আনা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে ভোটাররা যদি তাকে পছন্দ না করেন, ‘না ভোট’ দিতে পারবেন। তখন সেই আসনে পুনরায় নির্বাচন হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, নতুন সংশোধনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পলাতক আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রত্যেক প্রার্থীর দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। জনগণ যেন সহজেই জানতে পারেন তাদের প্রার্থীর আর্থিক অবস্থা কী।
তিনি বলেন, সংশোধনীর মধ্যে আরও রয়েছে, নির্বাচনী জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান বা চাঁদা দিতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং অনুদানদাতার ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী ভোটার ও নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ডাক ভোটে ভোট দিতে পারবেন। ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে পুরো এলাকার ভোট বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, জোটের প্রার্থীদের প্রতীক ব্যবহারে স্বচ্ছতা আনতে বিধান যোগ করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা সহজেই বুঝতে পারেন—কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস
Discussion about this post