নিজস্ব প্রতিবেদক
দেখতে ভীষণ আকর্ষণীয় ফুল সূর্যমুখী। হলুদ রঙা পাপড়িগুচ্ছের মাঝ বরাবর বাদামি বীজের মেলা দেখতে কার না ভালো লাগে। এই বীজ থেকে উৎপাদন করা হয় সূর্যমুখীর তেল। বর্তমানে ভোজ্যতেল হিসেবে বাড়ছে এই তেলের চাহিদা। হার্ট, লিভার, কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের সূর্যমুখীর তেলে রান্না করা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
রান্নার জন্য কোন তেল স্বাস্থ্যকর এ নিয়ে মতের শেষ নেই। কারো কারো মতে সরিষার তেল রান্নার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। কেউবা দেন অলিভ অয়েল খাওয়ার পরামর্শ। আবার বিশ্বের অনেক দেশে রান্নার কাজে নারকেল তেল ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী বীজ থেকে পাওয়া তেল দশগুণ বেশী পুষ্টিমান সমৃদ্ধ।
কেন খাবেন সূর্যমুখী তেল? রান্নায় এই তেল ব্যবহারের উপকারিতা কী? অন্যান্য তেলের সঙ্গেই বা এর পার্থক্য কোথায়? —সব প্রশ্নের উত্তর জানুন এই প্রতিবেদনে। প্রথমে চলুন সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই-
হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে
সূর্যমুখী তেলে রয়েছে কোলিন ও ফেনোলিক অ্যাসিড যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ই এর সমৃদ্ধ উৎস এই তেল। এই ভিটামিন হলো এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা মানবদেহের মধ্যে ফ্রি র্যাডিকেলস ছড়াতে বাধা দেয়। ফ্রি র্যাডিকেলগুলো হলো সেই বিপজ্জনক অণু যা শরীরের সব ভালো অণুগুলোকে আক্রমণ করে যেগুলো শরীরের অপরিহার্য ক্রিয়াকলাপের ওপর কাজ করে।
তাই ভিটামিন ই’যুক্ত সূর্যমুখী তেল হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি রক্তের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমা হতে বাধা দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
অন্যান্য ভোজ্য তেলের মতো সূর্যমুখী তেলে কোলেস্টেরল নেই। এতে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ভালো চর্বি হিসেবে বিবেচিত। সূর্যমুখী তেল দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অর্থাৎ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি খুবই উপকারি।
শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ায়
সূর্যমুখী তেলে আছে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এগুলো শক্তি জোগায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এক কাপ (২২৪ গ্রাম) সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ১৯৮০ ক্যালরি, এক টেবিল চামচ তেলে রয়েছে ১২০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি। প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। এটি দেহের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও ভূমিকা রাখে।
হাড় ভালো রাখে
হাড় সুস্থ ও মজবুত করে সূর্যমুখী তেল। এই তেল হাড়ের জোড়ায় ব্যথা সারিয়ে তুলতে খুবই উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। পাশাপাশি এটি হাড়ের জয়েন্টগুলো নমনীয়তা করতে সাহায্য করে। বাড়ায় হাড়ের শক্তি।
oil5
মস্তিষ্কের জন্য উপকারি
সূর্যমুখী তেলে উপস্থিত কোলিন স্মৃতিশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই উপাদান।
ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে
সূর্যমুখীর তেলে রয়েছে সেলেনিয়াম যা জটিল ব্যাধি ক্যানসার প্রতিরোধ করতে খুবই পারদর্শী। নিয়মিত এই তেলে রান্না করা খাবার খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
oil6
শরীরের ব্যথা ও ক্ষয় রোগ দূর করে
সূর্যমুখী তেলে থাকা ভিটামিন-ই দেহের নানারকম ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে সূর্যের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি থেকে। ত্বকের অযথা বুড়িয়ে যাওয়া এবং ক্ষয় রোধে এই তেল খুবই উপকারী।
হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণ করে
সূর্যমুখী বীজের তেলে অন্যান্য ভোজ্য তেলের চেয়ে বেশি ভিটামিন ই। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব দেশে অলিভ অয়েল ও সূর্যমুখী তেলের ভোক্তা বেশি সেসব দেশে শ্বাসরোগীর হার কম। অন্যদিকে যারা সয়াবিন, ভুট্টা ও সরিষার তেল ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে শ্বাসরোগীর সংখ্যা বেশি।
Discussion about this post